এসএসসি ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়া। একটি ভাল এবং পছন্দের কলেজে গৃহীত হতে, আপনাকে একাদশ শ্রেণীর অনলাইন প্রস্তুতি ফর্ম ব্যবহার করতে হবে। একাদশ শ্রেণির জন্য অনলাইনে আবেদন করলে ভর্তির প্রস্তুতির ফর্ম আরও কার্যকর হয় |
অনেক শিক্ষার্থীর যোগ্যতা থাকা সত্বেও পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পাওয়ার কারন সঠিকভাবে পছন্দক্রম না নির্বাচন করতে পারা। কয়েকটি বিষয় খেয়াল করলে তুমি ও তোমার পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি ফর্ম ডাউনলোড ও পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গাইডলাইন নিয়ে এই ব্লগটি লিখা হল।
বিগত বছরের মতো, আপনাকে এই বছরও অনলাইন অগ্রাধিকার তালিকার (priority list) মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়তপুরন দেখে নেওয়া যাক।
১) Priority List তৈরি
অনলাইনে কলেজ নির্বাচন এর জন্য তোমাকে একটা priority লিস্ট তৈরি করতে হবে। তোমার সব থেকে বেশি পছন্দের কলেজের স্থান হবে সবার উপরে এবং পর্যায়ক্রমে কম পছন্দের কলেজ গুলোর স্থান নিচে নিচে সাজাতে হবে। কাজটা দেখতে সহজ হলেও এইখানে যথেষ্ট ভুল হওয়ার সম্ভবনা আছে।
প্রথমেই চলো সেগুলো দেখে নেই।
ক) মার্কস বিবেচনা করে অগ্রাধিকার প্রদান: বর্তমানে এসএসসি এবং এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই তোমার প্রাপ্ত নম্বরের মার্কশিট এবং ফলাফল প্রকাশিত হয়। প্রথমেই তোমাকে জানতে হবে, কলেজ কখনোই জিপিএ দেখে তোমাকে নির্বাচন করবে না! কষ্টের কথা এই যে, সবসময়ই তোমার মার্কস দেখে তোমাকে নির্বাচন করা হবে কলেজের জন্য। তাই তোমার মোট নম্বর যোগ করে ফেলো এবং জানো মোট ১৩০০ নম্বরের মধ্যে তুমি কত পেয়েছো। এখন কিছু বিষয় নিয়ে সতর্ক হতে হবে; তার মধ্যে অন্যতম হলো, তুমি কত পেয়েছো আর তোমার আশেপাশে সবাই কত পেয়েছে। এটা একটু তুলনা করলেই দেখতে পাবে পার্থক্যটা আর বুঝতে পারবে তুমি কোন পর্যায়ে আছো । যেহেতু পরীক্ষা শেষ এবং রেজাল্টও তোমার হাতে, তাই এই মুহূর্তে আসলে রেজাল্ট খারাপ হলেও মন খারাপ করার কিছুই নেই। মন খারাপ করলে তো রেজাল্ট পরিবর্তন হবে না, তাই না? তাই যে নম্বর হাতে আছে তাতেই সন্তুষ্ট থেকে সামনে এগিয়ে যাও। এখন তুমি নিজেও অনুমান করো আর বড় ভাইয়া-আপুদের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখো, আসলে কোন কলেজের জন্য কত নম্বর পেলে চান্স পাওয়া যায়। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে, ভেবে চিন্তে তারপর দেখো আসলে কোন কলেজে তোমার ভর্তি হবার চান্স আছে। তোমার হয়তো অনেক নামকরা একটা কলেজে ভর্তির ইচ্ছা ছিলো কিন্তু নম্বর খারাপ থাকার কারণে মনে হচ্ছে তুমি চান্স পাবে না। তাহলে তোমাদের জন্য একটা পরামর্শ থাকবে, সেই কলেজকে Priority list-এ জায়গা দিওনা। যদি মনে হয় কোন একটা কলেজ যা তোমার পছন্দের, এবং সেখানে তোমার চান্স পাওয়ারও সম্ভাবনা আছে, কেবল সে কলেজকে অগ্রাধিকার দিবে। কারণ রেজাল্ট ৩ বার দেওয়া হয়ে থাকে। তুমি যদি এই ৩ ধাপেই লেগে থাকো তোমার স্বপ্নের কলেজ পেয়েও যেতে পারো!
খ) “ব্রাঞ্চ”এর বিষয়ে সতর্কতা: আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষিয় হলো ব্রাঞ্চ। ধরি তোমার প্রিয় কলেজ “x”। যার ২টি ব্রাঞ্চ আছে মিরপুর এবং মতিঝিল। তুমি হয়তোবা “ক” মিরপুরে ভর্তি হতে চাও, কিন্তু তোমার লিস্টের শুরুর দিকে “ক” মতিঝিল দিয়ে রেখেছো! এই ভুলের জন্য তোমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। তাই সব কিছু জেনে নিয়ে বুঝে শুনে লিস্ট তৈরি করো।
২) দূরত্ব:
HSC এর সিলেবাস নবম-দশম শ্রেণির সিলেবাসের থেকে অনেক বেশি বড় এবং এখানে সময় অনেক কমর। এই অল্প সময়ের মধ্যে তোমার উচিত বেশিরভাগ সময় পড়ার কাজে ব্যয়। তোমার কলেজ যদি বাসা থেকে অনেক দূরে হয় তাহলে প্রতিদিনের যাতায়াতে অনেক সময় লেগে যাবে। আর দিন শেষে তুমি ক্লান্ত হয়ে যাবে। তাই পড়ালেখায় মনোযোগ বসানো এবং সামনে ভালো করা তোমার জন্য হয়ে যাবে অনেক কষ্টের বিষয়। তাই তুমি যে লিস্ট তৈরি করবে সেখানে শুরুর দিকে এমন কলেজগুলো দিও যেগুলো তোমার বাসার নিকটবর্তী। বাসা নিকটবর্তী যদি নাও হয়, তাহলে এমন রেখো যেন কলেজ থেকে বাসায় আসা-যাওয়া করতে দিনে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় না হয়।
৩) পূর্ববর্তী বছরগুলোর রেজাল্ট:
তোমার উচিত হবে তোমার জন্য উপর্যুক্ত কলেজ বাছাই করার পূর্বে কলেজের পাশের হার কেমন, পরীক্ষার্থী কত জন এবং জিপিএ-5 কতজন পেয়েছে, সেগুলো দেখে তারপর কলেজ নির্বাচন করো।
আমাদের দেশে এখনও কোন একটা কলেজ ভালো অথবা খারাপ এটি নির্বাচন করা হয় বেশিরভাগ সময়েই কলেজটির পূর্ববর্তী বছরগুলোর রেজাল্ট দেখে। তোমারও উচিত হবে কলেজের পূর্ববর্তী বছরের রেজাল্ট সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েই কলেজে ভর্তি হওয়া।
৪) Extracurricular Activities:
আসলে দিন শেষে তোমার রেজাল্ট যেমন জরুরি, তেমন তোমার অর্জন আর অভিজ্ঞতার বিষয়টিও জরুরি।Extracurricular activities তোমাকে এইসব অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করবে। তাই চেষ্টা করো কলেজ লাইফ থেকেই নানা ধরনের Extracurricular activities-এর মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে। সে জন্য তোমাকে যেমন আগে থেকে কলেজের রেজাল্ট কেমন তার খবর নেয়া লাগবে, ঠিক একইভাবে কলেজে কতগুলো ক্লাব আছে, তাদের রেগুলারিটি কেমন, কতগুলো ফেস্ট আয়োজন করা হয় ইত্যাদি বিষয়ের একটা ধারণা তোমার থাকা উচিত।
৫) Teacher-Student Ratio:
কলেজে শিক্ষক-ছাত্র সংখা অনেক গুরুত্ত বহন করে। সাধারণত ঢাকার কিছু এবং ঢাকার বাইরের অনেক কলেজেই ছাত্র অনেক হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম থাকে। যার ফলে দেখা যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্টের ঠিকমতো ক্লাস হয়না শিক্ষক স্বল্পতার কারণে। যেমন ধরো, বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে দেখা যায় সায়েন্স,কমার্স এবং আর্টস-সবার জন্যই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক একটি বিষয়। আর এই বিষয়ের শিক্ষকের অভাব ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সব অঞ্চলেই। শুধু মাত্র একটা বিষয় না বরং সায়েন্সের অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকেরও সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকে অনেক কলেজে। তাই আগে থেকেই শিক্ষক ও ছাত্রের অনুপাত সম্পর্কিত ধারণা রেখেই কলেজ নির্বাচনের লিস্ট তৈরি করা উচিত।